শিরোনাম :

দোয়ারা বাজারের প্রেরনার বাতীঘর জামায়াতের স্থপতি: মাওলানা আমজাদ হোসাইন


দোয়ারাবাজার সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ আবু সালেহ মোঃ আলা উদ্দিন ।

দোয়ারাবাজার উপজেলায় ইসলামী আন্দোলনের ভিত্তি রচনায় যাদের অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে প্রধানতম ব্যক্তিত্ব জনাব মাওলানা আমজাদ হোসাইন। উপজেলা সদরের পাশেই নৈনগাঁওয়ে তার নিবাস। নৈনগাঁও মুক্তিযুদ্ধ সহ নানা কারনে বিখ্যাত।
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রকাশ্যে কাজ শুরু করে। এরপর দোয়ারাবাজার উপজেলায় সংগঠনের কাজ শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। মূলত: তখনই মাওলানা আমজাদ হোসাইনের হাতে দোয়ারাবাজার উপজেলায় জামায়াতের গোড়াপত্তন ঘটে। তার সহযোদ্ধা ছিলেন বাংলাবাজারের জনাব মরহুম ডাঃ আব্দুল মান্নান, নৈনগাঁওয়ের জনাব মরহুম লোকমান আহমেদ, শরীফপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মরহুম মাস্টার আবুল হোসেন,পান্ডারগাঁওয়ের জনাব মরহুম মাস্টার জয়নাল আবেদীন প্রমুখ।
পড়ালেখা করেছেন কানাইঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী গাছবাড়ী মাদ্রাসায়। সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক আমীর মরহুম মাওলানা আহমদ হোসাইন যখন ঐ মাদরাসার ফাজিল ক্লাসের ছাত্র তখন মাওলানা আমজাদ হোসাইন দাখিল শ্রেণিতে পড়তেন। সেখানেই তাঁদের পরিচয় ও সম্পর্ক।  ১৯৭০-৭১ সালে কানাইঘাটের ঘটনাবহুল সংকটের অন্যতম ভিকটিম ছিলেন মাওলানা আমজাদ। তার বসবাস স্থল ও স্থায়ী ঠিকানার বাড়িঘর পুড়িয়ে  ছারখার করে দেয় দুস্কৃতিকারীরা।
জানমালের নিরাপত্তা ও জীবন জীবিকার তাগিদে ১৯৮১ সালে পাড়ি জমান সৌদি আরবে। সেখানে সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। পরিস্থিতি অনুকূল বিবেচনায় ১৯৮৬ সালে ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। সেই থেকে এখনো আছেন জনম মাটিকে আঁকড়ে ধরে। ১৯৮৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাকে ডেকে পাঠান সাবেক জেলা আমীর, পেপার মিল সিবিএ এর নির্বাচিত সেক্রেটারী মাওলানা আহমদ হোসাইন সাহেব। ছাতক এসে যোগাযোগ করলে তার হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় সাংগঠনিক বইপত্র, দাওয়াতি উপকরণ ইত্যাদি। ছাতক থেকে ফিরে এসে উপরোল্লিখিত সহযোদ্ধাদের সংগঠিত করে দোয়ারাবাজার উপজেলায় শুরু করেন জামায়াতের কাজ। একই সাথে তারই পৃষ্টপোষকতায় ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম শুরু হয়। তখন কাজের সুবিধার্থে দোয়ারা দক্ষিণ অঞ্চলের সর্বপ্রথম নাযিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাওলানা আমজাদ হোসাইন এবং উত্তর অঞ্চলের সর্বপ্রথম নাযিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মরহুম ডাঃ আব্দুল মান্নান।
মাওলানা আমজাদ মুকুটবিহীন এক সম্রাট। বর্তমানে তার কোনো পদ পদবী নেই ঠিক; কিন্তু দোয়ারাবাজার উপজেলার পথে ঘাটে মাঠে ময়দানে তথা প্রতিটি পরতে পরতে তার অবদান অনস্বীকার্য। উপজেলা ব্যাপী হেঁটে হেঁটে কিংবা নৌকায় চড়ে গ্রামে গ্রামে দাওয়াতী কাজ করেছেন। লোকদের সংগঠিত করেছেন। তখন দুইটি বাহনই ছিলো, নিজের পা আর নৌকা।
মাওলানা আমজাদ সংগঠনের দুর্যোগে, দুর্ভোগে ও সংকটে অগ্রগামী সিপাহসালার হিসেবে কাজ করেছেন। বাতিলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দৃঢ় পদক্ষেপে দ্বীনী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সহকর্মী ও জনসাধারণের সুখে দুঃখে জান বাজী রেখে কাজ করেছেন, অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।
মনে পড়ে ২০০৯ সালের কথা। এক বৈরী পরিবেশে আমাদের পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছেন তিনি। অসীম সাহসে উজ্জীবিত হওয়ার প্রেরণা দিয়েছেন। যখন আমার ও খলিল ভাইয়ের (সাবেক উপজেলা আমীর) উপর জঙ্গী কানেকশনের মামলা, সরকারী কাজে বাধাদানের মামলা, আগ্নেয়াস্ত্র মামলা, চাঁদাবাজি মামলা ও আল মদিনা একাডেমি উচ্ছেদ মামলা দায়ের করা হয় তখন মাওলানা আমজাদ ভাই ও ছাত্রনেতা শফিকুল ইসলাম এই দুইজন দিবারাত্রি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাশে ছিলেন।
১৯৮৯/৯০ সালে মাওলানা আক্কাছ আলী সিলেটের চাকুরী ছেড়ে সংগঠনের কাজের জন্য বাড়িত চলে আসেন। আক্কাছ সাহেবরা দোয়ারাবাজার আসার পর উপজেলায়  ইমারত হয়। তখন মাওলানা আমজাদ সাহেব একটু স্বস্তি অনুভব করেন। আমজাদ ভাই এখনও দ্বীনের পথে অবিচল আছেন। শপথের কর্মী না হলেও একজন উদার চিত্তের নেতা হিসেবে বটবৃক্ষের ন্যায় আমাদের ছায়া হয়ে আছেন। তিনি কখনও সংগঠনের কাজে পিছপা হননি। শান্ত ও দৃঢ় স্বভাবের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই মানুষটি আনুগত্যের শৃঙ্খল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেননি। লোভ লালসায় বশীভূত হয়ে আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও শপথের পরিপন্থি কোন কিছুতে নিজেকে যুক্ত করেননি।
মাওলানা আমজাদ সমগ্র উপজেলা ব্যাপী একজন শালিসী ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সর্বজনগ্রাহ্য। প্রতাপপুর কাজি কলমদর দাখিল মাদরাসার সুপার হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘ প্রায় ১৯ বছর। তিনি দোয়ারাবাজার ডিগ্রী কলেজ গভর্নিংবডি ও দোয়ারা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির প্রতিটির ৩বারের সদস্য এবং খাতুনে জান্নাত টাইটেল মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য।  জনাব আমজাদ '৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে সংগঠনের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের কারিগর জনবান্ধব এই মহৎপ্রাণ মানুষটি ১৯৯৭ সালে দোয়ারা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে সম্মানজনক ভোট লাভ করেন। এখনও তিনি শিক্ষা ও জনসেবায় নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন। গোটা উপজেলায় তার মতো আরো নিবেদিতপ্রাণ দ্বীনের মুজাহিদ রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে স্থানীয় সংগঠনের ইতিহাস ঐতিহ্য জেনে রাখা উচিত। তৃনমূলের এসকল দায়িত্বশীলদেরকে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় সিক্ত করে যথাযথ কদর ও মূল্যায়ন করলে আমাদের কোন কমতি হবেনা। তাদেরকে সামনে এনে তুলে ধরতে পারলে এবং কাজে লাগাতে পারলে দ্বীনী আন্দোলন আরো বেশি উপকৃত হবে।
প্রায় ৭২ বছর বয়সী মাওলানা আমজাদ এখনো দেহ-মনে তরুণ। তার কথাবার্তা, জীবনাচরন, চলাফেরা তরুণদেরও হার মানাবে। ৪ ভাই ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট মাওলানা আমজাদ। ভাই-বোনরা কেউ বেঁচে নেই। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ২ পুত্র ও ৪ কন্যা সন্তানের জনক। তার নাতি নাতনিও বেশ কয়েকজন। পারিবারিকভাবে সবাই দ্বীনী কাজের সাথে সম্পৃক্ত। আমাদের এই শ্রদ্ধাভাজন মুরব্বীর সকল দ্বীনী ও কল্যানকর কাজগুলো মহান আল্লাহ কবুল করুন, তাকে সুস্থতার সাথে নেক হায়াত দারাজ করুন, আমীন।
মোঃ আলা উদ্দিন
দোয়ারাবাজার, সুনামগঞ্জ
01767495535


Commentbox

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন

Laptop

Recents